বিশ্বের প্রথম হাইব্রিড কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার চালু করলো জাপান
প্রযুক্তির উৎকর্ষের নতুন মাইলফলক স্থাপন করলো জাপান। সম্প্রতি জাপানের প্রকৌশলীরা বিশ্বের প্রথম কার্যক্ষম হাইব্রিড কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার চালু করেছেন। এই নতুন সুপারকম্পিউটার, যার নাম ‘রেইমেই’, ২০-কিউবিটের একটি শক্তিশালী কোয়ান্টাম প্রসেসর নিয়ে গঠিত।
দ্রুতগতি ও শক্তিশালী গণনা ক্ষমতার জন্য একে বিশ্বের ষষ্ঠ দ্রুততম সুপারকম্পিউটার ‘ফুগাকু’র সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই নতুন প্রযুক্তি জটিল গণনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব আনবে।
হাইব্রিড কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার: নতুন যুগের সূচনা
জাপানের রাজধানী টোকিওর কাছাকাছি সাইতামা অঞ্চলে অবস্থিত রিকেন সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউটে ‘রেইমেই’ স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি রিকেন সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউট এবং ‘কোয়ান্টিনুম’ নামের একটি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, এটি মূলত পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হবে। সুপারকম্পিউটারের সাধারণ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই হাইব্রিড সুপারকম্পিউটার আরো জটিল হিসাব-নিকাশ দ্রুততম সময়ে সমাধান করতে পারবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিপ্লবী শক্তি
কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমান প্রযুক্তির অন্যতম বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জ। যেখানে সাধারণ কম্পিউটার ১ এবং ০ ভিত্তিক বাইনারি লজিক ব্যবহার করে কাজ করে, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একাধিক সম্ভাবনা একইসঙ্গে বিশ্লেষণ করতে পারে।
এই বৈশিষ্ট্যের কারণে সুপারকম্পিউটারের জন্য যেখানে হাজার বছর সময় লাগতে পারে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাহায্যে সেই কাজ মুহূর্তের মধ্যেই সমাধান করা সম্ভব। তবে এখনো এই প্রযুক্তি গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে এবং পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠেনি।
তাই জাপানের বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে প্রচলিত সুপারকম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
‘রেইমেই’-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
বেশিরভাগ কোয়ান্টাম কম্পিউটার সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট ব্যবহার করলেও, ‘রেইমেই’ এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ট্র্যাপড-আয়ন কিউবিট’ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে চার্জযুক্ত পরমাণু বা আয়নকে বিদ্যুতচুম্বকীয় ক্ষেত্রে আলাদা করে রাখা হয় এবং লেজারের মাধ্যমে তাদের কোয়ান্টাম অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে কোয়ান্টাম তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ট্র্যাপড-আয়ন কিউবিটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এতে দীর্ঘ ‘কোহেরেন্স টাইম’ পাওয়া যায়, যার ফলে অন্যান্য প্রযুক্তির তুলনায় ভুলের পরিমাণ কম হয় এবং আরও নির্ভুলভাবে গণনা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
বিশ্বের প্রথম কার্যক্ষম হাইব্রিড সুপারকম্পিউটার
‘রেইমেই-ফুগাকু’ হচ্ছে বিশ্বের প্রথম পুরোপুরি কার্যক্ষম হাইব্রিড সুপারকম্পিউটার। এর আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে এ ধরনের প্রযুক্তি চালু করার চেষ্টা করেছিল।
যেমন, জার্মানির গার্চিং শহরে ‘SuperMUC-NG’ নামের সুপারকম্পিউটারের সাথে ২০-কিউবিট কোয়ান্টাম প্রসেসর যুক্ত করা হয়েছিল। তবে সেটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু ‘রেইমেই’ প্রথম পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরী হাইব্রিড কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সম্ভাবনা
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তিগত বিপ্লবের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ওষুধ আবিষ্কার, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্লেষণ এবং সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাপানের এই নতুন হাইব্রিড কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটারের সফল কার্যকারিতা ভবিষ্যতের কম্পিউটিং জগতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। গবেষণা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা আগামী দিনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করবে।