তার ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন: বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনা
তারবিহীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন (Wireless Power Transmission - WPT) বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার, যা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
বর্তমানে আমরা তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহন করে থাকি, তবে তার ছাড়াই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ধারণাটি বহু বছর ধরেই গবেষকদের আগ্রহের বিষয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিভাইস চার্জিং, বৈদ্যুতিক যানবাহনের শক্তি সরবরাহ এবং স্যাটেলাইট ভিত্তিক সৌরশক্তি ব্যবহারের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
তারবিহীন বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মূলনীতি
তার ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পেছনে মূলত তিনটি প্রধান প্রযুক্তি রয়েছে:
১. চৌম্বকীয় সংযোজন (Magnetic Induction): ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইনডাকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমান সময়ে ওয়্যারলেস চার্জিং প্যাড এই প্রযুক্তির অন্যতম ব্যবহার।
২. চৌম্বকীয় অনুরণন (Magnetic Resonance): দুটি কুণ্ডলী নির্দিষ্ট অনুরণন ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিচালিত হলে, তাদের মধ্যে কার্যকরী শক্তি সঞ্চালন সম্ভব হয়। এটি তুলনামূলক দূরবর্তী বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য কার্যকর।
৩. মাইক্রোওয়েভ বা লেজার ভিত্তিক সংক্রমণ: বিদ্যুৎকে মাইক্রোওয়েভ বা লেজার রশ্মিতে রূপান্তর করে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে প্রেরণ করা হয়। এটি বড় দূরত্বে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি।
বিদ্যমান ও সম্ভাব্য ব্যবহার
বর্তমানে তারবিহীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন:
- স্মার্টফোন ও গ্যাজেট চার্জিং: কিউই (Qi) চার্জিং প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক স্মার্টফোন এখন তার ছাড়া চার্জ করা যায়।
- বৈদ্যুতিক যানবাহন চার্জিং: তারবিহীন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি করা সম্ভব, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সুবিধাজনক হবে।
- চিকিৎসা সরঞ্জাম: ইমপ্ল্যান্টেড মেডিকেল ডিভাইস (যেমন পেসমেকার) চার্জ করার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে পারে।
- শিল্প ও সামরিক খাতে: ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলোর নিরবচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এটি কার্যকর হতে পারে।