মেছতা দূর করতে চান? এই টিপসগুলো জেনে নিন

মেছতা, যা মুখের ত্বকে কালো বা বাদামি দাগের আকারে দেখা যায়, ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। এটি মূলত মুখের উপরিভাগে, বিশেষ করে গালে, নাকের পাশে এবং কপালে দেখা যায়। মেছতা আমাদের আত্মবিশ্বাসে কিছুটা আঘাত হানতে পারে, তাই অনেকে এটি দূর করতে চান। চলুন জেনে নেওয়া যাক মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায় ও কিছু কার্যকর টিপস।

মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

মেছতার কারণ

মেছতা ত্বকের পিগমেন্টেশন সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়। মেছতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV Rays): সরাসরি সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা মেছতা তৈরি করে।
  • হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায়, মেনোপজের সময়, বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণের কারণে হরমোনের পরিবর্তন মেছতার সৃষ্টি করতে পারে।
  • জিনগত কারণ: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে মেছতার প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • ত্বকের প্রদাহ: কোনো ইনজুরি বা ত্বকের প্রদাহের পরেও মেছতার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মেছতা দূর করার প্রাকৃতিক টিপস

মেছতা দূর করার জন্য বাজারে নানা ধরনের প্রসাধনী পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে এটি দূর করার চেষ্টা করলে ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে। নিচে কিছু প্রাকৃতিক টিপস দেওয়া হলো:

১. অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সাহায্য করে।

  • তাজা অ্যালোভেরা পাতার জেল বের করে মেছতার ওপর প্রয়োগ করুন।
  • ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
  • প্রতিদিন নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

২. লেবুর রস

লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে।

  • একটি লেবু কেটে তার রস বের করে মেছতার জায়গায় প্রয়োগ করুন।
  • ১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন, তবে খুব সংবেদনশীল ত্বক হলে এটি এড়িয়ে চলুন।

৩. মধু ও দুধের মিশ্রণ

মধু ও দুধ ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং মেছতা কমাতে কার্যকর।

  • ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ দুধ মিশিয়ে মেছতার উপর প্রয়োগ করুন।
  • ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

৪. হলুদ গুঁড়ো ও বেসন

হলুদে থাকা কারকিউমিন ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

  • ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও ২ চা চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
  • এই পেস্টটি মেছতার জায়গায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।


জীবনযাপনে পরিবর্তন

মেছতা কমাতে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি, যেমন:

  • সূর্যের রশ্মি থেকে দূরে থাকুন: বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন: বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার মেছতা দূর করতে সহায়ক।
  • প্রচুর ঘুম এবং স্ট্রেস কমান: পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কম থাকলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, যার ফলে মেছতার প্রবণতা কমে।

চিকিৎসার বিকল্প

যদি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মেছতা কমাতে না পারেন, তাহলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল পিল, মাইক্রোডার্মাব্রেশন, লেজার থেরাপি ইত্যাদি কার্যকর হতে পারে।


পরিশেষ

মেছতা দূর করা কিছুটা সময়সাপেক্ষ এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। প্রাকৃতিক টিপস এবং জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মেছতা কমানো সম্ভব। তবে কোনো সমস্যা বেশি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা ত্বকের অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সুস্থ ত্বক পেতে নিয়মিত যত্ন নিন এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নিজেকে আরও সুন্দর করে তুলুন।

আরও পড়ুনঃ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url